আকরাম আরও জানান, দীর্ঘদিন কোকেন নেয়ার পর স্ত্রী হুমা তাকে একদিন ধরে ফেলেন। স্ত্রীর কথাতেই তিনি সাহায্য নেয়ার কথা ভাবেন। আকরাম বিস্তারিত জানিয়েছেন কীভাবে ধীরে ধীরে তার আসক্তি বাড়তে থাকে।
পাকিস্তানের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। খেলা ছাড়ার পর কোকেন নেয়া শুরু করেন এই চ্যাম্পিয়ন ফাস্ট বোলার। আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে তাকে পুর্নবাসন কেন্দ্রে ভর্তি হতে হয়।
এই আসক্তির কথা প্রায় দুই দশক পর আত্মজীবনী ‘সুলতান: আ মেমোয়ার’-এ নিজেই লিখেছেন আকরাম। প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা বইটির কিছু অংশ আকরামের একটি সাক্ষাৎকারসহ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমস।
ওয়ানডে ও টেস্টে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ উইকেট নেয়া বোলার আকরাম তার বইয়ে জানিয়ছেন তিনি ২০০৩ সালে খেলা ছাড়ার পর কোকেনে আসক্ত হয়ে পড়েন। এ আসক্তি তৈরি হয় খেলার মাঠের উত্তেজনার অভাব থেকে। কোকেন আসক্তি শেষ হয় ২০০৯ সালে তার প্রথম স্ত্রী হুমা আকরামের মৃত্যুর পর।
আকরাম শনিবার প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি মেতে থাকছে পছন্দ করতাম। পার্টি করতে ভালো লাগত। দক্ষিণ এশিয়ায় খ্যাতি আপনার সবকিছু কেড়ে নেয়, আকাঙ্ক্ষিত ও কলুষিত করে দেয়ার মতো। এক রাতে ১০টা পার্টিতেও আপনাকে যেতে হতে পারে। এবং অনেকে যায়ও। আমার ওপর এ জীবন অনেক চাপ তৈরি করছিল।
‘সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো আমি কোকেনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলাম। ইংল্যান্ডে এক পার্টিতে আমাকে যখন কোকেন অফার করা হয় তখন নির্দোষ ভেবে আমি তা নিই। ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে। একটা সময় এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে কোকেন ছাড়া আমি কাজ করতে পারতাম না।’
আকরাম আরও জানান, দীর্ঘদিন কোকেন নেয়ার পর স্ত্রী হুমা তাকে একদিন ধরে ফেলেন। স্ত্রীর কথাতেই তিনি সাহায্য নেয়ার কথা ভাবেন। আকরাম বিস্তারিত জানিয়েছেন কীভাবে ধীরে ধীরে তার আসক্তি বাড়তে থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমি একসময় আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না। এক লাইন থেকে চার লাইন। চার লাইন থেকে এক গ্রাম। এক গ্রাম থেকে দুই গ্রাম। কোকেনের ব্যবহার বেড়েই চলছিল। আমি ঘুমাতে পারতাম না। খেতে পারতাম না। নিজের ডায়বেটিসের দিকে কোনো খেয়াল ছিল না। মাথাব্যথা হয় ও মেজাজ ক্রমাগত বদলাতে থাকত।’
আকরাম জানিয়েছেন পুনর্বাসনকেন্দ্রে গিয়েও খুব একটা লাভ হয়নি তার। সেখানে চিকিৎসকেরা রোগ সারানোর চেয়ে অর্থ আয়ের দিকেই মনোযোগী ছিলেন বেশি। শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর চেষ্টাতেই এই আসক্তি থেকে মুক্তি পান ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ী ওয়াসিম আকরাম।
আকরাম বলেন, ‘আমি যতই চেষ্টা করি না কেন, আমি যা করেছি সেটার গ্লানি আমাকে এখনও পোড়ায়। আমার আত্মসম্মানে আঘাত লাগত। কিন্তু ওই জীবনটা আমাকে টানত। হুমার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদও করতে চেয়েছি ওই সময়। ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কাজ করার সময় আমি আবারও কোকেন নেয়া শুরু করি।
‘তারপরও হুমা নিঃস্বার্থভাবে আমাকে এই আসক্তি থেকে সারিয়ে তুলেছিল। ওই জীবনটা আমি ছেড়ে এসেছি।’
নিজের আত্মজীবনীতে এমন বিস্ফোরক তথ্য থাকায় কিছুটা অস্বস্তিতে আছেন আকরাম। তবে তিনি জানান বই প্রকাশিত হলে তার আর কোনো উদ্বেগ থাকবে না।
আকরাম যোগ করেন, ‘আমার বয়স এখন ৫৬। ২৫ বছর ধরে আমি ডায়বেটিসে ভুগছি। বইটা লিখেছি আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ের জন্য। তাদের একজনের বয়স ২৫, আরেকজনের ২১। মেয়ের বয়স ৭। তাদের আমি নিজের গল্পটা জানাতে চেয়েছি।’
0 Comments