লে. কর্নেল শেখ খালিদ বলেন, ‘আজকের বৈঠকে সীমান্তে মিয়ানমার থেকে গোলা পড়ে বাংলাদেশে হতাহতের ঘটনা, মাইন পুতে রাখা, মিয়ানমারের কোনো নাগরিক আর অনুপ্রবেশ না করা, মাদক চোরাচালান বন্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। ভবিষ্যতে তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে কোনো ধরণের গোলা বা মাইন যাতে আমাদের সীমান্তে পুঁতে রাখা না হয়, সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করা হয়েছে।’
গেল দুই মাস ধরে চলা সংঘর্ষের প্রভাব বাংলাদেশে পড়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবির সঙ্গে বৈঠকে একথা জানিয়েছে সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপির প্রতিনিধি দল।
বৈঠকে সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালানের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি।
প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠক শেষে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ ইফতেখার।
নাফ নদীর সীমান্তে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে রোববার সকাল ১০টার দিকে বিজিবির ‘সাউদান পয়েন্ট’-এর সম্মেলন কক্ষে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। সেটি শেষ হয় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে।
লে. কর্নেল শেখ খালিদ বলেন, ‘আজকের বৈঠকে সীমান্তে মিয়ানমার থেকে গোলা পড়ে বাংলাদেশে হতাহতের ঘটনা, মাইন পুতে রাখা, মিয়ানমারের কোনো নাগরিক আর অনুপ্রবেশ না করা, মাদক চোরাচালান বন্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি।
‘ভবিষ্যতে তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে কোনো ধরণের গোলা বা মাইন যাতে আমাদের সীমান্তে পুঁতে রাখা না হয়, সে বিষয়ে তাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করা হয়েছে।’
মিয়ানমার প্রতিনিধিদের বরাত দিয়ে বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছেন, যা এতদিন তাদের সঙ্গে হয়নি। একই সঙ্গে সীমান্তে বসবাসরত সাধারণ বাসিন্দাদের জানমাল রক্ষায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।’
বৈঠক শেষে রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আজিজুর রউফ বলেন, ‘এটি নিয়মিত চলতে থাকবে। বৈঠক হলে দুই দেশের সীমান্তের নানা ঘটনার বিষয়ে আলোচনা সম্ভব হয়। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। পাশাপাশি ভয়-আতঙ্কে ছিল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু, দৌছড়ি, উখিয়ার পালংখালী ও টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের মানুষ। এসব বিষয়ে তাদের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।’
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখারের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও মিয়ানমার মংডুর ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল কাও না ইয়ান শো-এর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে এই বৈঠক হয়।
সীমান্তে উত্তেজনার রেশ শুরু হয় চলতি বছরের আগস্টে। নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনী ও রাখাইন প্রদেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপ। গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমারে ছোড়া দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। তবে বিস্ফোরিত না হওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বিমান থেকে ছোঁড়া আরও দুটি মর্টার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে। একইদিন বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে উড়ে যায় মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান।
এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর আবারও বাংলাদেশে অভ্যন্তরে এসে পড়ে কয়েকটি মর্টার শেল। যার মধ্যে শূণ্যরেখায় একটি মর্টার শেল বিস্ফোরিত হয়ে মারা যান এক রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আহত হয় আরও ৬ জন।
তুমব্রু সীমান্তে বন্ধ হতেই নতুন করে উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত ও টেকনাফ সীমান্তে শুরু হয় গোলাগুলি।
সবশেষ গত ২৩ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নতুন করে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি। দুইদিন চলার পর এখন পর্যন্ত আর গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি।
0 Comments