যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে, অংশগ্রহণমূলক নয়

7475-7

 


যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বললেও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেনি বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, আমেরিকানরা এসে চলে গেল। তারা মূলত একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলতে চেয়েছে। বন্ধুদেশ হিসেবে এ রকম নির্বাচন তাদের কাম্য। এখানে কাউকে ধমক দিয়ে বা ভিসা নীতি আসবে, নিষেধাজ্ঞা আসবে, এটা না করলে ওইটা হবে, এ ধরনের উক্তি তারা করেনি। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেনি।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়।

সভায় বিদেশি প্রতিনিধিদের সফর সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে বিদেশিরা এসেছেন নির্বাচন সম্পর্কে জানতে, পরিবেশ দেখতে। সবাই যে শুধু নির্বাচনের জন্য আসছেন, সেটা কিন্তু না। আমেরিকানরা প্রথমে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন। তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেননি। তাঁরা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁরা আসার আগে বিএনপি তাদের অপপ্রচারের মাধ্যমে যে আশঙ্কা, ধারণাটা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, সেটা হচ্ছে এবার আর সরকারের উপায় নাই। নিষেধাজ্ঞা নির্ঘাত আসছে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা সরকারকে বিপদে ফেলবে—বিএনপি এমনটা মনে করেছিল বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কাদের। তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসবে। হয়তো সরকারকে বলে দেবে, এই ভাবে নির্বাচন করো। পার্লামেন্ট বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তত্ত্বাবধায়ক এসে যাবে। আবার প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। এসব কিছু ধারণা, আশঙ্কা তারা (বিএনপি) তৈরি করেছিল।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, শেষ পর্যন্ত কী হলো? তাঁরা (যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা) মূলত একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলেছেন। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো কিছুই তাঁরা বলেননি। অবাধ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ছিল তাঁদের বক্তব্যের মূল কথা, মূল আলোকপাত।

বিএনপির চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে বিদেশি প্রতিনিধিদের বিভ্রান্ত করতে তাদের কাছ থেকে যে পক্ষপাতমূলক সমর্থন চেয়েছিল, সেটা ব্যর্থ হয়েছে।

বিদেশিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার ও নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রতি সমর্থন করেছেন বলেও দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতিও তাঁরা ব্যক্ত করেছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, বিএনপি আসলে চিত্রটা বুঝে গেছে। তারা গত ডিসেম্বরে বলেছে গণ-অভ্যুত্থান। এখন গণ-অভ্যুত্থান থেকে পদযাত্রা। তাদের নেতা-কর্মীরা হতাশ। তিনি বলেন, ‘ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যে অপপ্রচার হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে ঢাকা শহর তারা ঘিরে ফেলবে, আমরা পালানোর পথ পাব না।’

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের কারও উসকানি বা খারাপ আচরণের জন্য নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষুণ্ন হয়েছে, এ দুর্নামটা নিতে চাই না। এটা আপনাদের বলে দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের আচরণে আমরা একটি দায়িত্বশীল সরকারি দল, তার প্রমাণ জনগণের সামনে রাখতে হবে। নির্বাচন সামনে রেখে আমরা এমন কিছু বলব না, করব না, যাতে আমাদের সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি বা সংশয় সৃষ্টি হয়। আর জনগণ যেন মনে না করে, আমরা সংঘাতের কোনো উসকানি দিচ্ছি। কয়েকটা মাস আমাদের ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আখতার, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচি
এখন থেকে আওয়ামী লীগের সব সমাবেশের নাম ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ হবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রা করবে।

ওই দিন গাবতলী থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি রয়েছে।

১৯ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত শোভাযাত্রা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এটি বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় কি না, তা জানতে চান ওবায়দুল কাদের। তখন এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে আলোচনা হলেও কর্মসূচির স্থান চূড়ান্ত হয়নি।

বিএনপি ১৯ জুলাই আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছে।

গতকালের বৈঠকে ওবায়দুল কাদের বলেন, ৩০ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা রংপুর যাবেন। আগস্ট মাসে তিনি ব্যাপকভাবে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করবেন। সেই সূচি তৈরি হচ্ছে। সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে থাকবে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া আগস্ট মাসে কৃষক সমাবেশ, ছাত্র সমাবেশ, শ্রমিক সমাবেশ, যুব সমাবেশ করার জন্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের।

সভায় এক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে চান, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের নাগরিক মেন্দি সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ উঠেছে। জবাবে তিনি বলেন, এগুলো গুজব। এ ধরনের কোনো তথ্য তাঁর জানা নেই।

2475-3

0 Comments